২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় ভোটারবিহীন নির্বাচন। ২০১৮ সালে গ্রহণ করা হয় দিনের ভোট রাতে। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ‘আমি-ডামির নির্বাচন’। মানুষের অংশগ্রহণহীন কথিত এসব ‘নির্বাচন’কে ভিত্তি ধরে দেশে সর্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো শেখ হাসিনার দুর্ভেদ্য মাফিয়াতন্ত্র। ‘নির্বাচন’ নামের প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং তৎকালীন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, দলন-পীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আইনি পথ অবারিত হচ্ছে। এমন সম্ভাবনাই নির্দেশ করছে হাইকোর্টের জারিকৃত একটি রুল।
রিটের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রুলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগ নিয়ে দেশের কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না-মর্মে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিলো। এই ‘দায়মুক্তি’ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-জানতে চাওয়া হয়েছে এই রুলে। এ তথ্য জানিয়েছেন রিটের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ সাদিক, জিএম মোজাহিদুর রহমান, মিসবাহ উদ্দিন, জোবায়দুর রহমান, নোয়াব আলী, আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী, সাজ্জাদ সরওয়ার, মোজাহিদুল ইসলাম, মিজানুল হক এবং একেএম নুরুন নবী রিটের বাদী।
তাদের পক্ষের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগ নিয়ে দেশের কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না-মর্মে যে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল সেটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী একটি রিট ফাইল করি। রিটে দায়মুক্তি প্রদান কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না-জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ এর ধারা ৯ চ্যালেঞ্জ করেছি। ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ২০২২ সালের ৯ ধারার মাধ্যমে ইতোপূর্বে নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। যা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এই ধরনের দায়মুক্তি সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’র ৯ নম্বর ধারায় যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে অতীতে যেসব নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই নিয়োগ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। যেহেতু প্রশ্ন তোলা যাবে না- সেহেতু ধরে নিতে হবে এ নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ছিলো। আমরা আইনের এ ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করেছি। কারণ নিয়োগ বৈধ কি অবৈধ এ প্রশ্নই উত্থাপন করা যাবে না-এ কথা বলাটাই অসাংবিধানিক। কারণ আদালতের এখতিয়ার রয়েছে সবকিছু খতিয়ে দেখার। সুপ্রিমকোর্টে রিট জুরিসডিকশনের মধ্যে যে পাওয়ার আছে সেটি আইন করে কেড়ে নেয়া যায় না। অন্যকোনোভাবেও কেড়ে নেয়া যায় না। এটিকে বলা হয়েছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর একটি অংশ। এ আর্গুমেন্টে যদি এ রুল অ্যাবসলুট হয়, নির্বাচন কমিশনের যে এপয়েন্টমেন্ট প্রসেস, সার্চ কমিটির সুপারিশক্রমে প্রেসিডেন্ট যে নিয়োগ দিয়েছেন সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাহলে নির্বাচন কমিশনারদের যে কৃতকর্ম, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের দেশে নজির রয়েছে এ ধরনের ঘটনাকে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন’ বলে কনডন করার। কখনো কখনো কনডন করে কখনো কখনো করে না। যেমন সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর কিছু কিছু সংশোধনী কনডন করা হয়েছে। কিছু কিছু করা হয়নি। ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এখানে কিন্তু ‘নির্বাচন’ বিষয়টিই বিতর্কিত। এ নির্বাচনে কেউ কমফোর্টেবল ছিলেন না। এখনকার কমিশনও কমফোর্টেবল নয়। তাদেরকে যখনই ওই নির্বাচনের কথা বলা হয় তখন অ্যামবারাস ফিল করেন। এ কারণে এ রিটের কনসিকোয়েন্স নির্বাচনের ওপর পড়বে বলে আমার ধারণা। এটি নির্ভর করছে, শুনানির পর আদালত কি ধরনের নির্দেশনা দেবেন, কি ধরনের গাইডলাইন দেবেন-তার ওপর নির্ভর করছে।
‘কিন্তু নির্বাচনের নামে যারা প্রহসন করলো, যারা প্রতারণা, দুর্নীতি ও আত্মসাৎ করলেন- এই রুল চূড়ান্ত হলে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব কি না?’ প্রশ্ন করা হলে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, না। এই রিটের আলোকে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে না। কারণ, অতীতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর কিছু কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়া হয়েছে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড’ হিসেবে। আমার মনে হয় এই রিটের মাধ্যমে কারো বিচার করার মতো কোনো গাইডলাইন বা ইন্সট্রাকশন আসবে বলে আমি মনে করি না। কারণ ফৌজদারি অপরাধের বিচার করতে হলে পৃথক মামলা লাগবে। সেপারেট ইনভেস্টিগেশন হতে হবে। এভিডেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এটি এই রিটের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি বলেন, দণ্ডবিধির অধীনে ফ্রড বা চিটিং একটি অপরাধ। ওনারা যদি ইলেকশন সংগঠনের ক্ষেত্রে যদি ফ্রড করে থাকেন, কত পার্সেন্ট ভোট পড়েছে আর কত পার্সেন্ট ভোট দেখানো হয়েছে-এগুলোর ওপর ইন্ডিপেন্ডেন্ট তদন্ত হতে পারে। রাষ্ট্রীয় জায়গায় বসে যদি কেউ ফ্রড করে থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রোপার মামলা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইনভেস্টিগেশন হতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইনডেমনিটি যদি না থাকে তাহলে উন্মুক্ত পরিবেশে নানা ধরনের রিয়াল পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে রাকিবউদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন এবং সেখানে নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে যিনি কর্মরত ছিলেন, তারা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে পর্যন্ত তারা হাস্যস্পদ বিষয়ে পরিণত করেছে। একইভাবে ২০১৮ সালে নূরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন হলো, সেখানে নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে হেলাল বলে একজনের নাম আমার মনে আছে, তিনি সহ পরিকল্পিতভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরেছে। একইভাবে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা মাঠপর্যায়ে ছিটিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদেরকে লাখ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের সৎ শিক্ষক, ব্যাংকারদেরকে চারিত্র্যিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে একতরফা নির্বাচন করেছে। একইভাবে ২০২৪ সালে আউয়াল কমিশনের যে নির্বাচন, যেটিকে শেখ হাসিনা নিজেই ‘আমি-ডামি’র নির্বাচন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ওই কমিশনে সচিব হিসেবে যিনি কাজ করেছেন তাকে প্রমোশন দিয়ে হাসিনা সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে নিয়ে বসিয়েছিলো। বর্তমান সরকার এসে যার নিয়োগ পরে বাতিল করেছে। আমি মনে করি ২০১৪ থেকে ২০১৮, ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যারাই কথিত এ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিৎ। কারণ তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। যে অপরাধে হাসিনা দোষী একই অপরাধে তারাও দোষী সাব্যস্ত হবেন।
প্রসঙ্গতঃ সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দীনের নেতৃত্বের সরকার আমলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন সম্পন্ন করে সাবেক আমলা এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ওই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হয়। সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ। নির্বাচনের আগে ‘মাইনাস-ওয়ান’ ফর্মুলায় বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানো, বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় কারাগারে নেয়া এবং দলটিকে খণ্ড-বিখণ্ড করার চেষ্টা ছিলো শামসুল হুদা কমিশনের। এর ফলে বিতর্ক ছিলো ওই নির্বাচনকে ঘিরে। তা সত্ত্বেও যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনটি হয়েছিলো সেহেতু এটিকে তুলনামূলক ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। ২০১০ সালে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। এর ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ৩টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে। নিজের অধীনে অনুষ্ঠিত কথিত এসব নির্বাচনে শেখ হাসিনা নিজেকে ‘বিজয়ী’ ঘোষণা করেন। এ সময় শেখ হাসিনার হুকুম মোতাবেক ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় একতরফা নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতের মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসতে বাধ্য করে। অবসরপ্রাপ্ত সাবেক আমলা মোহাম্মদ রাকিবউদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনেও আশ্রয় নেয়া হয় চাতুর্যের। নানা ছল-ছুঁতোয় গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে তখন নির্বাচনে আনা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, দিনের ভোট রাতে দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখেন আ’লীগ প্রার্থীরা। কথিত ওই ‘নির্বাচন’র আয়োজক ছিলো শেখ হাসিনার অনুগত আমলা কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনার। নৈশভোটেই নিজেকে ‘জয়ী’ দাবি করে শেখ হাসিনা পুরো দেশকে নিয়ে নেন লৌহমুষ্টিতে। গণতন্ত্রের পরিবর্তে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করেন মাফিয়াতন্ত্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে আয়োজন করা হয় ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’। বিএনপি-জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। এ প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা নিজ দলের প্রার্থীদেরকে ‘ডামি প্রার্থী’ করে প্রায় ৩শ’ আসনেই এমপি করে নিয়ে আসেন। নির্বাচন আয়োজন করে শেখ হাসিনার অনুগত আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। এভাবে গত দেড় দশকে পরপর তিনটি ‘নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হয়-যাতে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। দেড় দশকে আর্থিক খাতে ব্যাপক লুণ্ঠন, অর্থ পাচার, মূল্য স্ফীতি, মুদ্রা স্ফীতি, বেকারত্ব, দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত হওয়ার বিপরীতে শেখ হাসিনার মুখে খৈ ফোটে কথিত ‘উন্নয়ন’ বাণীর। রাজনৈতিক বিরোধী ও ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কালাকানুন প্রণয়ন, মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ, বিচারের নামে প্রহসন করে নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে নিক্ষেপ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা দিয়ে শেখ হাসিনা মেতে ওঠেন নারকীয় পৈশাচিকতায়। এর অনিবার্য পরিণতিতে সাধারণ ছাত্রদের সামান্য ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’র স্ফুলিঙ্গ থেকে প্রজ্ব¡লিত হয় দাবানল। ছাত্র-জনতার বুক ঝাঁঝরা করে দাবানল চিরতরে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয় শিশুসহ বহু মানুষ। সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়োগ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। ছাত্র-জনতার নিরঙ্কুশ সমর্থনে দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার অন্তর্বর্তীকালীন শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, দুঃশাসন, হত্যা, গুম-খুনের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে।